বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ অপরাহ্ন
ইমরান চৌধুরী
রহমত,মাগফিরাত ও নাজাতের সমন্বয়ে মাহে রামাযান। মাহে রামাযান উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য অন্যতম অফার। এ মাসের একটি ফরজ আমল সত্তরটি ফরজ আমলের সমতুল্য। একটি নফল আমল একটি ফরজ আমলের সমতুল্য।
হাদীস বর্ণীত হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় মাহে রামাযেনর রোজা রাখবে তার পেছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
অপর হাদিসে এসেছে রোজাদারের মুখনিঃসৃত ঘ্রাণ মিস্কাম্বেরর চেয়ে উত্তম সুগন্ধি। (বুখারী-হাদীস নং-১৮৯৪)
সিয়াম সাধনার জন্য সাহরি খাওয়া মোস্তাহাব। সাহরি সম্পর্কিত হাদিসের শব্দভাণ্ডার যাচাই করলে সাহরী খাওয়া মোস্তাহাবই প্রমাণিত হয়। আরবি সাহুর থেকে সাহরি এর উৎপত্তি। যার অর্থ হল, সাহরির সময় যা খাওয়া হয়, তথা রাত্রের শেষাংশের খাবার। বিভিন্ন হাদিসে সাহরি খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
হযরত আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণীত রাসুল সা. বলেন, তোমরা সাহরি করো, কেননা সাহরিতে রয়েছে বরকত। (বুখারী, হাদিস নং-১৯২৩, মুসলিম, হাদীস নং-১০২৫)
অপর হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি সিয়াম সাধনার ইচ্ছাপোষণ করবে,সে যেন সামান্য হলেও সাহরি করে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১৪৫৩৩)
সাহরি যেকোনো সময় খেয়ে সিয়াম সাধনা করা যায়। তবে সাহরির খাবারের উত্তম সময় হল রাত্রের শেষাংশ।
হযরত যায়দ বিন সাবিত রা. থেকে বর্ণীত তিনি বলেন, আমরা রাসুল সা. এর সঙ্গে সাহরীর খাবার ভক্ষণ করলাম অতঃপর তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম আযান ও সাহরির মধ্যে কতটুক সময়ের ব্যবধান? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, ৫০খানা আয়াত তেলাওয়াত করার সমপরিমাণ সময়। (বুখারী, হাদিস নং-১৯২১, মুসলিম, হাদিস নং-১০৯৭)
অত্র হাদিসে নামাজ দ্বারা উদ্দেশ্য ফজরের নামাজ এবং আযান দ্বারা উদ্দেশ্য হল ফজরের আযান বা ইক্বামত। অতএব রাসুল স. সাহরী শেষ করে নামাজে দাঁড়ানোর দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, সাহরির উত্তম সময় হল রাত্রের শেষাংশে। কেউ যদি রাতের প্রথমাংশে কিংবা মধ্যরাতে সাহরীর খেয়ে রোজা রাখে বৈধ হবে। তবে তা হবে সুন্নতের পরিপন্থী।
সাহরি যেভাবে সুন্নত ঠিক তদ্রূপ সাহরির মধ্যে রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। নিম্নে সাহরীরর কয়েকটি উপকারিতা তুলে ধরা হল।
১. সাহরির মাধ্যমে ইবাদতের সক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। দ্বীনের বেলা নামাজ, তেলাওয়াত ও নফল ইবাদাত করার ক্ষেত্রে শারিরিক শক্তিসঞ্চার হয়। কেননা ক্ষুধার্ততা ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
২. সাহরির বরকতে রোজাদারের হজম ও সংযম শক্তি বলবৎ থাকে। তাই রাতের বেলা আহারের ফলে দিনের বেলা রোজাদার থেকে উত্তম আচরণ পাওয়া যায়। অন্যথায় সাহরি থেকে মাহরুম হওয়ার ফলে দিনের বেলা প্রায়ই খিটখিটে মেজাজের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
৩. সাহরীর ফলে সিয়ামসাধনার কষ্ট লাঘব হয় এবং সিয়ামসাধনার প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি হয়।
৪. সাহরির খাবার খেলে রাসুলের সুন্নতের অনুসরণ হয় এবং সুন্নতপালনের সওয়াব অর্জন হয়। রোজাদারগণ এর মাধ্যমে দৈহিক শক্তি অর্জনের নিয়ত করলেও সওয়াবে কমতি হবে না।
৫. সাহরির সময় রাত্রের শেষাংশ। এ সময়ের ইবাদতের মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং খাবারের নিয়তে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ, কুরআন তেলাওয়াত এবং নফল ইবাদাতের সুযোগ পাওয়া যায়।
৬. সাহরির মাধ্যমে আহলে কিতাব এবং মুসলিদের রোজার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়। কেননা আহলে কিতাবিরা সাহরি না খেয়েই সিয়ামসাধনা করে। হাদিসে এসেছে, মুসলমান এবং আহলে কিতাবীদের রোজার মধ্যকার পার্থক্য হল সাহরির খাবার।
৭. সাহরি ঠিক সময়ে করার ফলে ফজরের নামাজ জামাতের সহিত আদায় করার সুযোগ হয়। সাহরির লক্ষ্যে জাগ্রত থাকার ফলে ফজরের নামাজ জামাতের সাথে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা যায়। এজন্য মাহে রামাযানে ফজরের জামাতে মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
আল্লাহ তা’লা আমাদেরকে মহিমাময় মাহে রামাযানের বরকত দ্বারা আলোকি করুন এবং সঠিক সময়ে সাহরি করে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন।
লেখক: শিক্ষক, ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক